গত ১০ ডিসেম্বর ‘ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামে‘ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ‘কিং খান লাইভ ইন ঢাকা‘ অনুষ্ঠানটি। আর এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলো ‘অন্তর শোবিজ‘। জমকালো এই অনুষ্ঠানে শাহরুখ সহ অন্যান্য অতিথি শেফালি, অর্জুন রামপাল, এশা কোপিকার, রাণী, নিরাজ পুরোটা সময়ে মাতিয়ে রাখে দর্শকদের।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে শাহরুখ মঞ্চে আমন্ত্রন জানান কিছু দর্শককে। তারা মঞ্চে এসে শাহরুখের সাথে সুর মিলিয়ে নাচতে থাকে। সাথে থাকে হিন্দি আর ইংলিশ সংমিশ্রণের অনেক ডায়লগ। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে শাহরুখের কিছু আচরণ অনেকটা আপত্তিকর ছিলো। কারণ, সেটা আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে খাপ খায় না। আর সেটা নিয়েই অনেকে অনেক কথা বলা শুরু করেছে।
কিন্তু আমরা কি একবারও মনে করেছি, শাহরুখকে গালিগালাজ করে কি লাভ হচ্ছে? আগত সবাই কিন্তু ঠিকই তাদের সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলেছে। একটি বারের জন্যও কিন্তু তারা অন্য কোন সংস্কৃতির কাছে হাত পাতে নি। বরং তাদেরটাই সবার সামনে ভালোভাবে তুলে ধরেছে। আর আমরা…..সেটাকে গোগ্রাসে গিলেছি।
এখানে তো মনে হচ্ছে বড় অপরাধী আমরাই। কারণ, আমরাই তো অন্য সংস্কৃতিকে ধার করে আনছি আমাদের বিনোদনের জন্য। হ্যাঁ, এটা মানছি যে, বিশ্বায়নের এ যুগে পৃথিবী অনেক ছোট হয়ে এসেছে। এখন চাইলেই আমরা অন্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারছি। কিন্তু এর অর্থ তো এই নয় যে, আমাদের নিজেরটাকে বাদ দিয়ে অন্যেরটা নিয়ে মেতে থাকা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা আজ এই কাজটাই করছি। যার নমুনা আমরা গতকালকেই দেখিয়েছি। মঞ্চে দর্শকদের মধ্য থেকে যারাই উঠেছে তারা সবাই শাহরুখের সুরে সুর মিলিয়ে হিন্দি গানের তালে তালে কোমর দুলিয়েছে। কই, শাহরুখ তো একটিবারও ‘মাইকেল জ্যাকসনের‘ গানের তালে নেচে বেড়ান নি। তিনি কিন্তু তার নিজের ভাষাতেই অটুট ছিলেন। কিন্তু আমরা…….
‘অন্তর শোবিজ‘ প্রায় সময়ই দেশের বাহির থেকে বিভিন্ন শিল্পীকে এনে এ ধরনের শো করে থাকে। আর আমরাও হাজার হাজার টাকা খরচ করে সেই শো দেখতে ছুটে যাই। যেহেতু এ শো গুলো করছে দেশের বাইরের কিছু শিল্পী, তাহলে এটাই তো স্বাভাবিক….. তারা তাদের কালচারটাকেই তুলে ধরবেন। তারা তো আর আমাদের কালচার তুলে ধরবেন না। তাহলে এগুলো নিয়ে কেন এত কথা বলছি…..???
সত্যি বলতে আমাদের অভ্যাসটাই তো খারাপ হয়ে গেছে। আমরা মুখে বলি এক, আর কাজে দেখাই অন্যকিছু। আমরাই তো গলা ফাটিয়ে বলে বেড়াই….. দেশটা মায়ের মত। তাহলে আমরা নিজেই যদি নিজের মাকে সম্মান করতে না শিখি….তাহলে অন্য বাড়ির মানুষ এসে কি আমার মাকে সম্মান দেখিয়ে যাবে। এমনটা আশা করেন নাকি….??? যদি আশা করে থাকেন তাহলে বলবো ….. ভুল করছেন। কিন্তু দুঃখের কথা এই যে, ঠিক এই কাজটাই আমরা বাঙালীরা করছি। আমরা মাকে রেখে মাসিকে নিয়েই বেশী মেতে আছি।
তাই আমরা যতদিন না নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে শিখবো, ততদিন শাহরুখরা বাংলাদেশে বারবার আসবে। দর্শকদের মঞ্চে ডেকে নিয়ে শেখাবে কিভাবে বৌ কিংবা গার্লফ্রেন্ডকে ‘চুমা–চাটি‘ দিতে হয়। আর আমরাও সব ভুলে ওইগুলোই শিখবো। আর শাহরুখদের সাথেই কোমর দুলিয়ে নাচতে থাকবো….’এ লাভ মেরা হিট হিট….’
তাই, আগে আসুন সবাই মিলে নিজের দেশকে ভালোবাসতে শিখি….নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে শিখি। তারপরে না হয় গলা ফাটিয়ে এসব বিজাতীয় অনুষ্ঠানের প্রতিবাদ করি। এর আগে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে এর প্রতিবাদ করা কি আদৌ যৌক্তিক….????
আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন বর্তমান সময়ে হিন্দী ছবি বা গানে কিন্তু মৌলিকত্ব কম। হয় তারা হলিউডকে ধার করছে নয়তো পুরনো জনপ্রিয় বাংলা গানকে নকল করছে। তাদের সংস্কৃতি বাংলার মতো সমৃদ্ধ নয়। আমাদের সংস্কৃতি মানে বাঙালির সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। ওদের জাতীয় সংগীত একজন বাঙালীর লেখা, যার গান আমাদেরও জাতীয় সংগীত। তাই আমাদের উচিৎ নিজস্ব সংগীত, নৃত্য, পদ্য, গদ্য, নাটক সবকিছু ভিনদেশে তুলে ধরা। সরকার পর্যায়ে সংস্কৃতি বিনিময়ের চুক্তি হতে পারে। শাহরুখ যেমন পারফর্ম করলো, আমাদের জেমসও যেন ভারতে যেয়ে এরচেয়েও ভালো অনুষ্ঠান করতে পারে সে ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে।
অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ফেললাম, আসল কথাই বলা হয়নি; লেখাটা ভালো হয়েছে।
মনে হয় আমরাই ।